১৯৭১ সালের ০৬ মে পাক হানাদার বাহিনী ভোলা জেলা এসে ভোলা জেলা শহরে ওয়াপদা ভবনে অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকহানাদার বাহিনীর প্রথম যুদ্ধ হয় তৎকালীন টনির হাট বর্তমানে বাংলা বাজার নামক স্থানে। বর্তমান বোরহানউদ্দিন উপজেলায় পাক হানাদার বাহিনী অবস্থান গ্রহন করে ১৯৭১ সালের ২৯ অক্টোবর। মুক্তিযুদ্ধে ভোলায় অবস্থানরত সকল মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপ ২৮ অক্টোবর বোরহানউদ্দিন বাজারে মরহুম বশির আহাম্ম মিয়ার বিল্ডিং-এ একত্রিত হয়। সকল মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপ বোরহানউদ্দিনে ক্যাম্প করার সিদ্ধান্ত হয়। এক গ্রুপ বোরহানউদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এবঙ অন্যান্য গ্রুপ বোরহানউদ্দিন বাজার ও বাজারের আশ পাশ এলাকায় অবস্থান করেন। এ সংসাদ পেয়ে পাক হানাদার বাহিনী ২৯ অক্টোবার ১৯৭১ খ্রি. সকাল ০৬.০০ ঘটিকায় নদী পথে বোরহানউদ্দিন খেয়াঘাটে উপস্থিত হয়। খেয়াঘাটে এসেই হানাদার বাহিনী মর্টারে গোলা নিক্ষেপ শুরু করে এবং রাস্তায় এসে গুলি করতে করতে সিও অফিসের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। পাক বাহিনীর ছোট একটি গ্রুপ জনাব আজিজুল ইসলাম, তৎকালীন সার্কিল অফিসার’কে তাঁর বাসভবন থেকে ধরে নিয়ে বাজারের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। মুক্তিবাহিনী বাজার থেকে অবস্থান পরিবর্তন করে বোরহানউদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম দিকে অবস্থান করেন। অন্যদিকে পাক বাহিনীর একটি গ্রুপ ভোলা থেকে সড়ক পথে বর্তমান হ্যালিপ্যাড-এ অব্স্থান নিয়ে মেশিনগানের মাধ্যমে নির্মনভাবে গুলিবর্ষণ করাতে থাকে। খেয়াঘাট থেকে আসা পাক হানাদার বাহিনীদের আর সম্মুখে হটতে দেয়নি মুক্তিবাহিনী। বোরহানউদ্দিন বাজারের পুলের পার্শ্বে আসার সাথে সাথেই মুক্তিবাহিনী শুলি করতে শুরু করে। উভয় দিকেই চলতে থাকে বন্দুক যুদ্ধ। মুক্তিবাহিনী এবং পাক-হানাদার বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সুযোগ পেয়ে জনাব আজিজুল ইসলাম, তৎকালীন সার্কিল অফিসার খাল-এ লফিয়ে পরে প্রাণ বাঁচাতে স্বক্ষম হয়।
অন্য দিকে খেয়াঘাট দিয়ে আসা পাকা বাহিনীর একটি কমান্ডো গ্রুপ ০২টি জিপ ও ১টি পিক-আপ নিয়ে তৎকালীন এমসিএ জনাব রেজা-এ করিশ চৌধুরী (চুন্নু মিয়ার) খোঁজে আবদুল জব্বার মিয়া বাড়িতে হানাদেয়। বাড়িতে কোন লোকজন না পেয়ে ঐ বাড়িতে আগুন লাগানোর চেস্ট করে। সেখান থেকে তাড়াতাড়ি ফেরার পথে মুক্তি বাহিনীর একটি গ্রুপের মুখমুখি পড়ে উভয় পক্ষ তুমুল যুদ্ধ শুরু হয় এবং এই যোগাগুলিতে ০২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন। এ যুদ্ধে ০৪ জন পাক হানাদার বাহিনী নিহত হন। তারপর পাকা বাহিনী বোরহানউদ্দিন বাজারে একত্রিত হয়ে সম্পুর্ণ বাজার পুড়িয়ে ভষ্ম করে দেয়। ঐদিন বিকেলে পাকা বাহিনী সিও কোয়াটার গিয়ে ০২ জন কর্মচারীকে ধরে এনে গুলি করে হত্যা করে। সন্ধ্যায় পাক-হানাদার বাহিনী এ কোস্চানী সেনা বোরহানউদ্দিনে রেখে অন্যরা ভোলা চলে যায়। পাকা হানাদার বাহিনী বোরহানউদ্দিন সিও অফিসে অবস্থান নেয়। অন্যদিকে মুক্তিবাহিনীর সকল সদস্য বড়মানিকা আলতাফ হাওলাদার বাড়িতে জড়ো হয়। সেখানে মুক্তিবাহিনী আলাপ আলোচনা করে সিও অফিস আক্রমনের সিদ্ধান্ত নেয় ১০ নভেম্বর অফিসের চতুর দিক ঘেড়াও এবং ১২ নভেম্বর সিও অফিস আক্রমনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহন করে। কিন্তু ১১ নভেম্বর সকাল ০৯.০০ ঘটিকা মধ্যেই পাক-হানাদর বাহিনী বোরহানউদ্দিন ত্যাগ করে ভোলা সদর চলে যায়। আর বোরহানউদ্দিন হয় পাক-হানাদার মুক্ত।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস